সামনে শীতকাল চলে আসতেছে মধুর চাহিদাও আলহামদুলিল্লাহ তুলনামূলকভাবে অনেক বেড়ে গেছে।
সমগ্র পৃথিবীতে ২ টি উপায়ে মধু আহরণ করা হয়৷
১) প্রাকৃতিক মৌচাক থেকে।
২) কৃত্রিমভাবে মৌচাষের মাধ্যমে।
তবে ধারণা কম থাকায় অনেকেই মধু কেনার সময় প্রাকৃতিক চাকের মধুকেই প্রাধান্য দেন। চাষের মধু শুনলে কেউ কেউ সে মধু ক্রয় করতে ইচ্ছুক হয় না।
এক্ষেত্রে ২ টি বিষয় জানা জরুরি।
১।মৌমাছি কিভাবে মধু সংগ্রহ করে?
২।মৌচাষ আসলে কিভাবে করা হয়?
প্রথমটা ত সকলের জানা আছে! যে মৌমাছি প্রাকৃতিক চাকের হোক কিংবা কৃত্রিম মৌবাক্সের’ই হোক, ওরা ফুলে ফুলে ঘুরে Nectar বা মৌ রস সংগ্রহ করে ওদের মুখ দিয়ে পেটের ভিতরে নিয়ে যায়। এরপর মৌমাছির পেট থেকে বিভিন্ন ধরণের Enzyme নিঃসৃত হয় যা নেক্টারের সাথে মিশ্রিত হয়। এরপর মৌমাছি চাকে ফিরে অনেকটা বমি করার মতো সেগুলো মৌচাকের ছোট ছোট Cell বা কোষে একটু একটু করে জমা করে।
এই সদ্য নেক্টারে পানির পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। মৌমাছি কোষের কাছে বসে ওদের পাখা দিয়ে বাতাস করে (প্রতি সেকেন্ড প্রায় ২০০ বার পাখা ঝাপটায়) অতিরিক্ত পানি বাস্পাকারে উড়িয়ে দেয় এবং ঘণ মধুতে রুপান্তরিত করে। মৌমাছি যখন বুঝতে পারে যে মধুতে থাকা পানির পরিমান কমে গেছে তখন কোষের মুখ মোম দিয়ে বন্ধ করে দেয়(Capping)।
“মাছচাষ বা ফার্মে মুরগি পালনের মতো একই রকম নয়”। বিষয়টি ব্যাখ্যা করা যাক। ধরুন কোন ব্যাক্তি কার্প জাতীয় মাছ চাষ করেন। তিনি ইচ্ছে করলে পুকুরে উন্নতমানের খাবার দিয়ে একবছরে একটি মাছকে হয়তো ১০ কেজি ওজনের করতে পারবেন। কিন্তু মৌচাষ সেরকম কিছু নয়। কারণ মৌচাষ সম্পূর্ণ ফুলের উপর নির্ভরশীল এবং মৌমাছি ওদের ইচ্ছে মতো খাবে এবং মধু জমা করবে। মৌচাষকে কৃত্রিম বলা হলেও এটা সম্পূর্ণ প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রেও মৌমাছি প্রকৃতির বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে মৌবাক্সে জমা করে।
বিভিন্ন কারণে প্রাকৃতিক মৌচাক অনেক কমে গেছে এবং প্রাকৃতিক চাক থেকে খুব বেশি মধু উৎপাদিত হয় না। তাই বর্তমানে মধুর যে চাহিদা তার অধিকাংশই চাষের মধুর মাধ্যমে পূরণ হয়। আপনারা যারা দেশী বিদেশী অনেক কোম্পানীর মধু অনেক বেশি দামে সংগ্রহ করেন তার অধিকাংশই চাষের মধু। বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও মৌচাষ জনপ্রিয়তা পেয়েছে এবং দিন দিন আরও সম্প্রসারণ হচ্ছে।
তাই আসুন চাষের মধু সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা থেকে আমরা বের হয়ে আসি, মৌচাষকে উৎসাহিত করি।
লিখা- আনিসা হানি